বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

কবির মৃত্যু চাই

কবির মৃত্যু চাই

বুড়ো কবি আর নেই রসদ
শত অশ্লীল আর গোবরে পচা
সহজ আর সাবলীল
ধীর কিন্তু কঠিন কথা বলেছে সহজেই,
চরিত্রহীনের মত নিজ মননেরে
দিয়েছে সর্বোৎকৃষ্ট প্রশ্রয়াসন।

নিজেকে জাহির করে সম্মুক্ষে
জনতার মাঝে উচ্চস্বরে বলে
সে কবি তাহার কথাই সব
শত কত বিদ্রোহী তবু নিরব।

যে কবির জন্য
শত নারীর উন্মত্ত আবেগ
যার আবৃতি এনেছিল
প্রেমিকার চোখে জল
সেই কবির মৃত্যু চাই।

কবি প্রেমিকা  আজ মরে গেছে
কান্নার রোল থেমে গেছে
এসেছে নতুন কবি
পুরান আর বুড়ো কবিদের
আজ বড্ড নোংরা লাগে।

তবু বুড়ো কবিরা ব্লগ খুলে
পড়ে তাহার পুরানো কবিতা
যাতে প্রচ্ছদপট
তাহার প্রেমিকার হাত।

_____
মোহাম্মদ শাকিরুল ইসলাম
২৪.০২.২০১৬

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

তৃষ্ণা


ছেলেটি  খুজেনি মেয়েটির অধরে গভীরতা
তলিয়ে গিয়ে তার চুম্বনে তৃষ্ণার্ত আর উন্মুখ
লোকচক্ষুর অন্তরালে শুধুই দুইয়ে হয় এক
অনুভূতি যেখানে নিথর চেয়ে থাকা
আর দৃড় বিশ্বাস নিয়ে আঁকড়ে ধরা।

মেয়েটির ধমনীর সঞ্চানে কাঁপছে ছেলেটিও
শুধুই আমৃতু চুম্বনেই যেন সুখের পরম আস্বাদন
যেন এই মাত্র যুদ্ধবিমান উড়ে গেল
সাইরেন বাজিয়ে গেল সুনামির পুর্ব সংকেত
আর এম্বুলেন্স এর লাল বাতির এইদিক সেইদিক ঘুর্ণন।

ট্রাফিক জ্যামে চৌরাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে
চুম্বনরত বালক বালিকা, আজ উন্মাদ
পৃথিবীরর সকল সমুদ্র সম যেন তাহাদের তৃষ্ণা।

মিটেনি মিটবে না শুধুই প্লাবিত হয়ে যাবে কেউ
আর শুকিয়ে যাবে কারো অধরের ঢেউ
তবু তৃষ্ণা রয়ে যায় তৃষ্ণা বয়ে যায়।

____

তৃষ্ণা
-- মোহাম্মদ  শাকিরুল ইসলাম
০২ ফাল্গুন
চৌদ্দ /দুই/ষোল 

বুধবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১৬

তুমি চলে যাচ্ছো

 তুমি চলে যাচ্ছো !!
***************নির্মলেন্দু গুণ !

তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কল্লোল তুলে লঞ্চ ছাড়ছে,
কালো ধোঁয়ার ধস ধস আওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে
তোমার ক্লান্ত অপস্রিয়মাণ মুখশ্রী,--সেই কবে থেকে
তোমার চলে যাওয়ার দিকে থাকিয়ে রয়েছি।
তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার চলে যাওয়া কিছুতেই
শেষ হচ্ছেনা, সেই কবে থেকে তুমি যাচ্ছো, তবু
শেষ হচ্ছেনা, শেষ হচ্ছেনা।

বাতাসের সঙ্গে কথা বলে, বৃষ্টির সঙ্গে কথা বলে
ধলেশ্বরীর দিকে চোখ ফেরাতেই তোমাকে আবার দেখলুম;
আবার নতুন করে তোমার চলে যাওয়ার শুরু।
তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কল্লোল তুলে লঞ্চ ছাড়ছে,
কালো ধোঁয়ার ফাঁকে ফাঁকে তোমার ক্লান্ত অপস্রিয়মাণ
মুখশ্রী, যেন আবার সেই প্রথমবারের মতো চলে যাওয়া।
তুমি চলে যাচ্ছো, আমি দুই চোখে তোমার চলে যাওয়ার
দিকে তাকিয়ে রয়েছি, তাকিয়ে রয়েছি।

তুমি চলে যাচ্ছো, নদীতে কান্নার কল্লোল,
তুমি চলে যাচ্ছো, বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ,
তুমি চলে যাচ্ছো, চৈতন্যে অস্থির দোলা, লঞ্চ ছাড়ছে,
টারবাইনের বিদ্যুৎগতি ঝড় তুলছে প্রাণের বৈঠায়।
কালো ধোঁয়ার দূরত্ব চিরে চিরে ভেসে উঠছে তোমার
অপস্রিয়মাণ মুখশ্রী, তুমি ডুবতে ডুবতে ভেসে উঠছো।
তোমার চলে যাওয়া কিছুতেই শেষ হচ্ছেনা,
তিন হাজার দিন ধরে তুমি যাচ্ছো, যাচ্ছো আর যাচ্ছো।

তুমি চলে যাচ্ছো, আকাশ ভেঙে পড়ছে তরঙ্গিত
নদীর জোৎস্নায়, কালো রাজহংসের মতো তোমার নৌকো
কাশবনের বুক চিরে চিরে আখক্ষেতের পাশ দিয়ে
যাচ্ছে অজানা ভুবনের ডাকে। তুমি চলে যাচ্ছো,
আকাশ ভেঙে পড়ছে আকাশের মতো।
হে তরঙ্গ, হে সর্বগ্রাসী নদী, হে নিষ্ঠুর কালো নৌকা,
তোমরা মাথায় তুলে যাকে নিয়ে যাচ্ছো
সে আমার কিছুই ছিল না, তবু কেন সন্ধ্যার আকাশ
এরকম ভেঙে পড়লো নদীর জোৎস্নায়?
ভেঙে পড়লো জলের অতলে? তুমি চলে যাচ্ছো বলে?

তুমি চলে যাচ্ছো, ল্যাম্পপোস্ট থেকে খসে পড়ছে বাল্ব,
সমস্ত শহর জুড়ে নেমে আসছে মাটির নিচের গাঢ় তমাল তমসা।
যেন কোনো বিজ্ঞ-জাদুকর কালো স্কার্ফ দিয়ে এ শহর
দিয়েছে মুড়িয়ে। দু'একটি বিষণ্ণ ঝিঁঝিঁ ছাড়া আর কোনো গান নেই,
শব্দ নেই, জীবনের শিল্প নেই, নেই কোনো প্রাণের সঞ্চার।
এ শহর অন্ধ করে তুমি চলে যাচ্ছো অন্য এক দূরের নগরে,
আমি সেই নগরীর কাল্পনিক কিছু আলো চোখে মেখে নিয়ে
তোমার গন্তব্যের দিকে, নীলিমায় তাকিয়ে রয়েছি।
তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার বিদায়ী চোখে, চশমায় নুহের প্লাবন।
তুমি চলে যাচ্ছো, বিউগলে বিষণ্ণ সুর ঝড় তুলছে
অন্তর্গত অশোক কাননে। তুমি চলে যাচ্ছো, তোমার পশ্চাতে
এক রিক্ত, নিঃস্ব মৃতের নগরী পড়ে আছে।

অনন্ত অস্থির চোখে বেদনার মেঘ জমে আছে,
তোমার মুখের দিকে তাকাতে পারি না।
তোমাকে দেখার নামে তোমার চতুর্দিকে পরিপার্শ্ব দেখি,
বিমানবন্দরে বৃষ্টি, দু'চোখ জলের কাছে ছুটে যেতে চায়,
তোমার চোখের দিকে তাকাতে পারি না।

তুমি চলে যাচ্ছো, আমার কবিতাগুলো শরবিদ্ধ
আহত সিংহের ক্ষোভ বুকে নিয়ে প'ড়ে আছে একা।
তুমি চলে যাচ্ছো, কতগুলো শব্দের চোখে জল।