মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩

কনকনে শীতে গরম পোশাক বিক্রির ধুম

কনকনে শীতে কাঁপছে সারাদেশের
মানুষ। সবাই যেন একটা ডিপ
ফ্রিজের ভেতর সময় কাটাচ্ছে,
কারও কারও এমনটি মনে হয়। এবারের
শীতের প্রকোপ অন্য বছরগুলোর
চেয়ে একটু বেশি হবে হয়তো।
শীতের এই প্রকোপ থেকে নিস্তার
পেতে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে গরম
পোশাক কেনার ধুম। তবে বিক্রির
ধুমটা এবার শপিংমলগুলোর তুলনায়
ফুটপাতে অনেক বেশি। নিম্নবিত্ত
ও মধ্যবিত্তের মানুষ ফুটপাত থেকেই
পছন্দের গরম কাপড় কিনতেই
স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। রাজনৈতিক
পরিস্থিতির কারণে এবার দেশের
অর্থনীতির মেরুদণ্ড
অনেকটা ভেঙে গেছে। এসব
কারণে স্বল্প আয়ের মানুষের
পকেটে নেই খুব বেশি টাকা। আর
তাই ফুটপাতে বিক্রির
হিড়িকটা একটু বেশিই এবার।
যাত্রাবাড়ী, ফার্মগেট, সদরঘাট,
পোস্তগোলা, মিরপুর, লক্ষ্মীবাজার,
গুলিস্তান, আজিমপুর, ঢাকা কলেজ
এলাকা, ইসলামপুরের পুরো পথেই
চোখে পড়ে অস্থায়ী ও
ভ্যানগাড়িতে শীতের পোশাকের
ভাসমান বিক্রেতা।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন
এলাকার সড়কের দুই পাশ
রয়েছে ভাসমান হকারদের দখলে।
স্বল্পমূল্যেই এসব
ফুটপাতে পাওয়া যাচ্ছে শীতের
ব্লেজার, জ্যাকেট, কোট, জাম্পার,
চাদর, কম্বল, মাথার টুপি, কানটুপি,
হাতমোজা, পা-মোজা ইত্যাদি।
তবে অতীতের মতো এখন আর
ফুটপাতে কেনাকাটা করতে দরদাম
কষাকষির ভোগান্তিতে পড়তে হয়
না ক্রেতাদের। ফুটপাতের
অধিকাংশ বিক্রেতা এক দামে গরম
কাপড় বিক্রি করেন।
ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের
সামনে ফুটপাতের একটি ভ্যানের
সামনে কথা হয় মহসিন নামের এক
ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন,
‘ফুটপাতে অল্পদামে পছন্দনীয়
জামাকাপড় পাওয়া যায়। তাই
আমি এসেছি শীতের পোশাক
কিনতে। আমি একটি জ্যাকেট
কিনেছি ৩০০ টাকা দিয়ে।
এটি মার্কেট
থেকে কিনতে গেলে ১৫০০-২০০০
টাকার কমে হয়তো পেতাম না।
তবে ফুটপাতে আগে কেনাকাটা করতে বেশ
দরকষাকষি করতে হতো। এখন
এমনটি করতে হয় না, তাই
ভালো লাগে। দেখে পছন্দ
হলে কিনি, না হয় অন্য
দোকানে চলে যাই।’ গুলিস্তানেও
শীতের পোশাক এক
দামে বিক্রি হওয়ায়
বিক্রি বেড়েছে। ২০০-৫০০ টাকার
মধ্যে ফুটপাত থেকে শীতের
পোশাক কেনা যায়। এছাড়া কম
দামে শীতের ফ্যাশনেবল পোশাক
কিনতে পারেন ঢাকার
বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট ও
বঙ্গবাজার থেকে। নানা বয়সের
মানুষের শীতপোশাকের সম্ভার
সেখানে। সব ধরনের সোয়েটার,
ব্লেজার ও কোট পাবেন সেখানে।
কথা হয় বদরুদ্দোজা মার্কেটের
দোকানি আরিফের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক
দিনে বিক্রি বেড়েছে। হাতায়-
গলায় কুচি দেয়া, ভাঁজ
করা সোয়েটার চলছে বেশি।
কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন
সোয়েটার কম
বয়সী মেয়েরা কিনছেন। টি-
শার্টের মতো সোয়েটার,
ওভারকোট, ব্লেজারের
চাহিদা রয়েছে।’
পাতলা কাপড়ের সোয়েটার
চলছে বেশ। অল্প শীতে এ ধরনের
পাতলা সোয়েটার আরামদায়ক। এসব
সোয়েটার স্কিনজিন্স ছাড়াও
সালোয়ার-কামিজের
সঙ্গে পরা যায়। শাড়ির সঙ্গে পরার
জন্য ব্লাউজ কাটের ব্লেজার
পাওয়া যাচ্ছে। ছেলেদের
শীতের পোশাকে চামড়ার
জ্যাকেটের চাহিদা বেশি। এর
বাইরে প্যারাসুট কাপড়ের
জ্যাকেট, ব্লেজার কিনছেন কেউ
কেউ। এছাড়া অন্যান্য কাপড়ের
জ্যাকেট, ব্লেজারও পাবেন
এখানে। একটু ঘুরে ও দরদাম
করে কিনলে ২০০-২৫০০ টাকায়
আপনার পছন্দের শীতের ফ্যাশনেবল
পোশাকটি কিনতে পারবেন।
বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট,
গাউছিয়াসহ অন্যান্য মার্কেটেও
শীতের পোশাক কেনার ধুম
পড়েছে। গত কয়েক বছরে শাল বেশ
চললেও এবার সোয়েটারে বেশ
বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে।
মেয়েদের শীতের পোশাকে এবার
এসেছে নতুনত্ব। এসব সোয়েটার
অনেকটা টপসের মতো লম্বা।
মোটা উলের
পাশাপাশি আছে পাতলা উলের
এসব সোয়েটার। রঙ ও
কাটছাঁটে আছে বাহারি ভাব।
নূরজাহান সুপার মার্কেটের
দোকানি আলতাফউদ্দিন বলেন,
‘এবার মেয়েদের শীতের
পোশাকের মধ্যে একটু লম্বা (হাঁটুর
ওপর পর্যন্ত) সোয়েটার চলছে বেশি।
তার সঙ্গে মিলিয়ে অনেকে জিনস
কিনছেন।’ তাছাড়া কনুই পর্যন্ত
হাতাওয়ালা, সামনে বোতাম
বা চেইন দেয়া সোয়েটারও
কিনছেন অনেকে।
আছে হুডি দেয়া সোয়েটার।
হুডিতে আবার
অনেকে সুতি বা গেঞ্জির কাপড়
পছন্দ করছেন। ছেলেদের পোশাকের
বাজারও বেশ বৈচিত্র্যময়।
নানা ধরনের সোয়েটারের
মধ্যে মিলবে হাতাকাটা পাতলা সোয়েটার,
উলের মোটা সোয়েটার,
আছে নানা ধরনের জ্যাকেট ও
কোট। এক রঙের বা নানা রঙের
পাতলা-মোটা দুই ধরনের
হুডিওয়ালা সোয়েটার
আছে এখানে। বড় বোতাম
বা মোটা জিপারের জ্যাকেটও
আছে। লম্বা গলার সোয়েটারের
সঙ্গে আছে খাটো হাতাওয়ালা সোয়েটার।
কোনোটিতে আবার গলার
কাছে অতিরিক্ত কাপড়
পেঁচিয়ে ভিন্ন ঢঙ আনা হয়েছে।
ওয়েস্টকসের বসুন্ধরা সিটি শাখার
সেলস অ্যাসোসিয়েটস
সাহেরা আকতার বলেন,
তরুণেরা ফ্যাশনেবল সোয়েটারের
দিকেই ঝুঁকেছেন। দৈর্ঘ্যে হাঁটুর
ওপর পর্যন্ত এমন সোয়েটার
মেয়েদের কাছে এবার জনপ্রিয়।
হাইনেক, ফোল্ডিং ধরনের
সোয়েটারও ব্যবহার করছেন
অনেকে। এতে মাফলারের কাজ হয়।
কোনো কোনো সোয়েটার আবার
বড় গলার। ফুল হাতার
পাশাপাশি খাটো হাতার
সোয়েটারও চলছে। কালো, সাদা,
চাপা সাদা, ছাই, ধূসর ছাড়াও
হলদে সবুজ, লাল, গোলাপি, নীল
ইত্যাদি বিভিন্ন রঙের স্ট্রাইপ
দেয়া সোয়েটার প্রাধান্য
পেয়েছে।’ অফিস মানেই স্যুট-কোট
পরতে হবে, তা নয়। ফুলহাতা শার্ট-
টাই সঙ্গে সোয়েটারও
পরতে পারেন এই মৌসুমে।
যে কোনো গড়নের ছেলেমেয়েই
সোয়েটার পরতে পারেন। তবে এসব
সোয়েটারের গলা প্রশস্ত
হতে হবে।
সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ভি-
আকৃতির ডিজাইন করা সোয়েটার
পরতে পারেন। তবে ব্লেজার
বা কোট পরার সময় শরীরের গঠন ও
মুখের গড়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।
নইলে তা শরীরের সঙ্গে মানানসই
নাও হতে পারে।
এক্ষেত্রে উচ্চতা কম হলে স্ট্রাইপ
ব্লেজার পরা ভালো। এক রঙের
চেক ব্লেজার বেশি মানানসই
যাদের উচ্চতা বেশি।
যারা মাঝারি গড়নের,
তারা যে কোনোটিই
পরতে পারেন। শারীরিক গঠন
মোটা হলে এক বোতাম, চিকন ও
মাঝারি গড়ন হলে দুই-তিন বোতাম
দিয়ে ব্লেজার
পরলে ভালো দেখাবে। এক
বোতামের ব্লেজার মেয়েদের
বেশি মানায়। এক্সট্যাসির শীতের
এসব পোশাকের দাম পড়বে ৮৫০-৫০০০
টাকা পর্যন্ত। শীতের
জুতা নিয়ে হয়তো অনেকেরই
ভাবনা এখনও কাটছে না।
ভাবনা কাটাতে পরিচিত
হয়ে নিন এ সময়ের পাদুকার নতুন
ট্রেন্ডের সঙ্গে। বাজার
ঘুরে দেখা যায়, শীতে সবার নজর
কনভার্সের দিকে। নতুন কালেকশন
আর তার সঙ্গে বিভিন্ন রঙের মিশ্রণ
বেশ চলছে। তবে রঙের দিক
থেকে নীল ও হলুদ
রঙটা বেশি চলছে,
পাশাপাশি এদের মিক্সড রঙটাও
বেশ আকর্ষণীয়। হালকা-গাঢ়
বা মিক্সড লাল, সবুজ ও কালো রঙের
কনভার্সের চাহিদাটাও
বাজারে বেশি রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন