- শোনো , একটু অপেক্ষায় থাকো আমি আসছি .....
- কই যাও তুমি??
- বৃষ্টিবিলাস করতে .....
- জানিতো তুমি আস্ত পাগলী। তুমিতো আমাকে অপেক্ষাতে রেখে চলে যাবা। শেষ পর্যন্ত আমাকেই ফোনটা রেখে দিতে হবে .....
- হিহিহিহিহিহি ......
- এই , এমন ছাগলা হাসি হেসো না .... তোমাকে বাজে দেখায় ....
- হুহ ... কি বললা তুমি??? থাকো তুমি। আমি আর আসমু না ... জীবনেও আসমু না। ফোন দিলেও ধরমু না। হুহ পচা ... হারামি .......
- আরে .... ( টুট ... টুট .... টুট .....)
ফোনটা কেটেই দিলো ওপাশের জন। এপাশের জন হাসতে হাসতে আবার ফোন দেয়। ওপাশে একটা সুকন্ঠী নারী কন্ঠ শোনা যাচ্ছে ..... " এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না .." এপাশের জন অর্থাৎ অভ্র ভাবে , " পাগলীটা তাইলে প্রচন্ড ক্ষেপছে তাই ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। এবারও সরি টরি বলে রাগ ভাঙাতে হবে। এবার রাগ ভাঙাবো পাগলীটার বাসার সামনে ....." এরকম ভাবতে ভাবতে অভ্র রেডি হয়ে ভার্সিটি গেলো।
অতঃপর অনেক বছর পর অভ্র এসে দাঁড়িয়েছে আদ্রিতার কবরের সামনে। সাথে মৃন্ময়ী .... মৃন্ময়ী অভ্রের একমাত্র মেয়ে। নিজের মেয়ে বললে ভুল হবে। মৃন্ময়ী হলো অভ্রের নিজের মেয়ের থেকেও বড় কিছু। এই মৃন্ময়ীর মাঝে সে আবার আদ্রিতাকে পেয়েছিলো। আরে , আদ্রিতার কথা বলা হলো না। এই আদ্রিতা হলো অভ্রের পাগলীটা , অভিমানী প্রেয়সী। যে চলে গেছে নাম না জানা জায়গায়। তাকে চাইলেও ফেরানো যাবে না। বড্ড অভিমানী।
সেদিন ভার্সিটি শেষে আদ্রিতাকে বারবার ফোন দিতে থাকলো অভ্র। কিন্তু বারবার সেই এক কথাই "সংযোগ প্রদান করা সম্ভব নয়"| তারপর অভ্র ঠিক করে আদ্রিতার বাসায় যাবে। মিরপুরে "পথের শেষে " নিবাসে গিয়ে দেখে বাড়ির গেইট এ প্রচন্ড রকম ভিড়।অভ্র কিছু ভাবতে পারছে না। ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢোকার সময় মানুষ জন বলতে থাকলো "ইশ ... আদি মেয়েটা কত ভালো ছিলো ..." "ছাদে পা পিছলে ছয় তলা থেকে পড়ে গেলো মেয়েটা ...." এসব শুনতে শুনতে আদ্রিতার ঘরের সামনে গিয়ে দেখে একটি মায়াবী মুখ টা ঘুমিয়ে আছে..."কি সুন্দর করেই না ঘুমাচ্ছে আমার পাগলীটা ... আদি তুমি ঘুমাও তোমার ঘুম ভাঙাবো না ..পরে আসবো ...." এসব বলতে বলতে কখন যে অভ্রের মাথা ঝিম করতে লাগলো বুঝেনাই অভ্র। একবারের জন্যও কাঁদে নি। একসময় কন্ট্রোল করতে না পেরে নিচে নেমে পড়লো। বাড়ি থেকে বের হয়ে অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ করে ধাক্কা খেলো একটা পিচ্চি মেয়ের সাথে।অভ্র মেয়েটার দিকে একমনে তাকিয়ে থাকলো। মেয়েটা কাঁদতে শুরু অভ্র তাকে থামিয়ে বললো ,
- কিরে , ব্যাথা পাস নি তো???
- না ( কান্না মাখা কন্ঠে)
- তোর বাবা মা কই???
- নাই ....
- তাইলে কার সাথে থাকিস???
- দূর সম্পর্কের চাচির সাথে। আমাকে খালি মারে। এই জন্যই পালিয়ে এসেছি। এই দেখো দাগ ...
অভ্র মেয়েটার হাতের দাগের দিকে তাকিয়ে দেখলো আর সাথে সাথে মনটা কেমন করে উঠলো। আর অভ্রের চোখ যেনো আদ্রিতার হাত ই দেখলো। আনমনে অভ্র হঠাত্ বলে উঠলো , "পিচ্চি ,আমার সাথে যাবি???"
অভ্র মেয়েটাকে নিয়ে এই জনবহুল নগরীতে অগণিত মানুষের ভিড়ের মাঝে হেঁটে যাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে এ যেন অভ্র - মৃন্ময়ী নয় বরং হেঁটে যাচ্ছে অভ্র -আদ্রিতা ......... আর তাদের বহমান ভালবাসা।
Nilanjona Neela
22.06.2015