শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আমি শুধু দুটি কারণে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করছি...

২০০৯ এর এক দুপুরে...
ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির সামনের টঙের
দোকানে বসে সিগারেট খাচ্ছি... গেট থেকে বের
হলেন ভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্টার কায়ুম স্যার।
সিগারেট ফেলে দিলাম।
তিনি হাত ইশারা করে আমাকে ডাকছেন...
‘কোন ব্র্যান্ডের সিগারেট ‘?
‘জী স্যার বেনসন’।
‘ দাম কত’ ?
‘ ৭ টাকা’
‘ স্যারকে দেখে সিগারেট ফেলে দেয়ার অর্থ
জানো ? এর মানে হল ৭ টাকা পানিতে নষ্ট
করা... এখন থেকে স্যারকে দেখলে সিগারেট
হাতের তালুতে লুকিয়ে ফেলবে’
তিনি একটা সিগারেট
জ্বালিয়ে আমাকে দেখালেন কী করে জ্বলন্ত
সিগারেট হাতের
তালুতে লুকিয়ে রাখা যায়... !!
কিছুদিন পর স্যারকে দেখলাম ক্লাসের
সবাইকে নিয়ে গোলটেবিলে বসলেন... সবার
সামনে খালি প্লেট... প্লেটের
পাশে কাটা চামচ এবং ছুরি রাখা।
কাটা চামচ দিয়ে কীভাবে খেতে হয় অনেকেই
জানে না...
বড় বড় সেমিনারে এসবের নাকি দরকার আছে!
তিনি শেখাতে লাগলেন...
একসময় স্যার সহ সবাইকে দেখা গেল শুন্য
প্লেটে ছুরি চামচ দিয়ে বিরিয়ানি খাচ্ছেন !
আমার দেখা একজন সত্যিকারের শিক্ষক;
যিনি একাউন্টিং পড়তে আসা ছাত্রদের
হাতে গীটার তুলে দিতেন !
আমার লিখার বিষয় বস্তু কায়ুম স্যার না;
বছরের পর বছর ছেলেমানুষি পরীক্ষা কেন
নেয়া হচ্ছে? মেধাবীর ডেফিনেশন কী? কারেন্ট
ওয়ার্ল্ড মুকস্ত করা? ১২ বছর
ইংরেজিতে পরীক্ষা দিয়ে ইন্টারে এ প্লাস
পাবার পর সাইফুরসে ভর্তি হওয়া? দশ বছর
সমাজ বিষয়ে পড়ে , নোট করে, মুকস্ত করে...
অসামাজিক জীব হওয়া?
স্বয়ং আইনস্টাইন, টমাস এডিসন
পরীক্ষা পদ্ধতির বিপক্ষে... পরীক্ষা মানুষের
ভেতরে এক ধরনের ভয় ঢুকিয়ে দেয়। ভয়
নিয়ে জ্ঞান অর্জন সম্ভব না।
কিছুদিন আগে জাফর ইকবাল স্যার বলেছেন –
যদি কোন ছাত্র হারিকেন
জ্বালিয়ে পড়তে বসে তাহলে সেই দেশের
সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে যায়... কেননা জ্ঞান
এক ধরনের সম্পদ। কথাটায় ভুল আছে...
হারিকেন জ্বালিয়ে পড়ার ফলে দেশের
সম্পত্তি বাড়ে না; এর ফলে দেশের পাশ
করা সার্টিফিকেট বাড়ে...
আমার ব্যক্তিগত ধারণা একসময়
শিক্ষা পদ্ধতি থেকে এসব উঠে যাবে। মানুষ
ক্রমেই ন্যাকামি , লোক দেখানো জগত থেকে বের
হয়ে আসছে।
আগে বাসায় মেহমান
এলে প্লেটে নাবিস্কো বিস্কুট সাজিয়ে আপ্যায়ন
করা হত... তিনি হয়ত জানেন অতিথি বিস্কুট
খাবেন না; শুধু চা দিতে কেমন দেখায়... তাই
বিস্কুট নাটকের ব্যবস্থা।
এখন জিজ্ঞাসা করা হয় , কী খাবেন?
ইউরোপে অতিথি নিজেই
রান্না ঘরে গিয়ে চা বানিয়ে খেয়ে নেয়। লোক
দেখানো ব্যাপার থেকে আমরা পুরোপুরি মুক্ত না;
ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও
মেয়ে বিয়ে দিলে ঈদে টাকা ধার করে দুনিয়ার
জিনিস পাঠাতে হয়...
পৃথিবী অনেক দূর যাবে... সামাজিক ভনিতা এক
সময় পৃথিবী থেকে উঠে যাবে... কারেন্ট
ওয়ার্ল্ড মুকস্ত করার মত হাস্যকর
ভর্তি পরীক্ষা উঠে যাবে...
একটা উদাহারণ দেই...
আমাদের গেটের দারোয়ানের নাম হাবীব
চাচা। আমি তাকে দুটি জিনিস শেখালাম।
১- রবীন্দ্রনাথের জন্ম সাল কত?
২- হিটলারের জন্ম কোন গ্রামে হয়েছিল?
শেখার পর হাবীব চাচা এই দুটি প্রশ্নের উত্তর
জানেন।
আমাদের এপার্টমেন্টের দ্বিতীয় তলায়
চিটাগাং ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর
থাকেন। তার নাম মঞ্জুর আলম। আমি একদিন
মঞ্জু স্যারকে এই দুটি প্রশ্ন করলাম।
তিনি জবাব দিতে পারেন নি... তার পাশেই
হাবীব চাচা হাসতে হাসতে জবাব দিলেন।
এর মানে কী? হাবীব চাচা মঞ্জু স্যার
থেকে বেশি মেধাবী? অবশ্যই না...
এটা এক ধরনের তথ্যগত ইনফরমেশন...
জানা থাকলে ভাল... আমাদের প্রচলিত
শিক্ষা পদ্ধতিতে মেধার মাপ কাঠিই হল এই
তথ্যগত জ্ঞান !!
সরকারী ম্যাজিস্ট্রেট হতে হলে , বড়
আমলা হতে হলে দুনিয়ার মানুষের জন্ম সাল
মুকস্ত করবে, কোন দেশের রাজধানীর নাম
কী তা মুকস্ত করবে... যা দু মাস পর
মনে থাকবে না!
পৃথিবী অনেক দূর যাবে... ভনিতা এক সময়
পৃথিবী থেকে উঠে যাবে...
আমার নিজের কাছে মাঝে মাঝে খুব খারাপ
লাগে ; আমি নিজেও এই ভনিতার সাথে আছি।
বছরের পর বছর মুকস্ত করছি... কেন
করছি জানি না... সবাই করছে... আমাকেও
করতে হবে। অপছন্দের সাবজেক্ট
নিয়ে পড়ালেখা করছি... সবাই করছে। আমাকেও
করতে হবে।
তানাহলে এরা আমাকে বাঁচতে দিবে না...
তবে; ......
আমি শুধু দুটি কারণে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করছি...
১- আমার আব্বু আম্মু যথেষ্ট
পড়ালেখা করেছেন। আমার আর কোন ভাই নেই।
তাদের কেউ জিজ্ঞাসা করলে যেন বলতে না হয়
যে তাদের ছেলে ইন্টার পাশ !
২ -আমার ছেলে মেয়ে হয়ত অনেক উচ্চ শিক্ষিত
হবে। তাদের বন্ধুরা যখন তাদের
জিজ্ঞাসা করবে – তোমার বাবা কত টুকু
পড়ালেখা করেছে? সেই সময় যেন তাদের মুখ ছোট
হয়ে না আসে !!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন