বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৪

নীল, পরী এবং একটি ভালবাসার গল্প (১)


- কিরে কি খবর তোর?
- কোন খবর নাই
- মানে কি? কবে আসবি?
- জানিনা
- জানি না বললেই হবে? এতোদিন কেউ বাসায়
থাকে নাকি? গাধা একটা।
- হুম
- বল না কবে আসবি? কতদিন ঘুরতে যাই না।
- আসব আসব। এইতো কয়েকদিন পরই আসব।
- একসাথে বসে আমাকে জোছনা দেখানোর
কথা মনে আছে তো?
- হুম আছে
- আর আমি যে তোকে তিনটা চিঠি লিখতে বলছি,
তা কি লিখছিস?
- হুম লেখার চেস্টা করছি
- চেস্টা করলে চলবে না। লিখে আনবি। আর
হ্যাঁ তোকে যে বলছিলাম কোন এক
জোছনা রাতে আমার বাসার নিচে এসে ফোন
দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি আর আমি উপর
থেকে তোকে দেখব সেটা কি মনে আছে?
- হুম আছে। এতো কিছু করতে পারব না।
আমি কি তোর বয়ফ্রেন্ড লাগি নাকি? তোর জন্য
এতো কিছু করা লাগবে? তোর বয়ফ্রেন্ডকে এসব
করতে বলিস।
- না তুই আমার বয়ফ্রেন্ড না। তুই আমার জামাই
লাগস। একবার বউ বলে ডাক তো। কতদিন ডাকিস
না গাধা।
- ঠিক আছে বউ রাখি। পরে কথা হবে।
পরী আর নীল। দুজনে বেস্ট ফ্রেন্ড। এক দুই বছর
না পাক্কা চৌদ্ধ বছরের ফ্রেন্ডশীপ। সেই ছোট্ট
বেলা থেকে বন্ধুত্ব তাদের। একে অপরকে জামাই বউ
বলে সম্বোধন করে। পরী চাঞ্চল্যে ভরা একটা মেয়ে।
সবসময় হাসিখুশি আর সকলের সাথে মাস্তিতে ব্যস্ত
থাকে। নীল, ইন্ট্রোভাট টাইপের খুব চাপা স্বভাবের
একটা ছেলে হলেও বন্ধুদের আড্ডায় সবসময়
হাসিখুশি থাকার চেস্টায় ব্যস্ত থাকে। অনেক সময়
পারে অনেক সময় পারে না। মাঝে মধ্যে টুকটাক
কবিতা লেখার চেস্টা করে। আর কিছুটা পাগল
টাইপের। মাথার ভিতর যত সব পাগলাটে চিন্তাভাবনা।
একা একা রাস্তায়
হাঁটা অথবা হাইওয়েতে বৃষ্টিতে ভিজা নয়তো নির্ঘুম
চোখে রাতের আকাশে তারা গুণা আর হঠাত্ করেই
নিরুদ্দেশ হওয়া এসব তার পাগলামির অংশবিশেষ। আর
সমস্ত পাগলামির একমাত্র সাক্ষি এই পরী। নীলের
আনন্দ কষ্ট আর কেউ বুঝতে না পারলেও পরী ঠিকই
বুঝে।
(২)
- কই তুই?
- এইতো আসতেছি। পাঁচ মিনিট।
- আমি কতক্ষণ যাবত তোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি আর
তুই বলতেছিস পাঁচ মিনিট।
- স্যরি দোস্ত। জ্যামে আটকা পরছি।
- ঠিক আছে তারাতারি আয়। ফুলের দোকানের
সামনে আসবি।
-আচ্ছা
-কোনসময় তুই কি দেখছিস কোন মেয়ে কোন ছেলের
জন্য দাঁডায় থাকে? আর তুই কিনা আমায় পুরা এক
ঘন্টার মতো দাঁড় করায় রাখলি? ইচ্ছা করতেছে তোর
চুলগুলা টেনে ছিড়ি।
- ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা তাই কর। তাও রাগ করিস
না। রাগলে তোকে পেঁচার মত লাগে।
- তোর সাথে কোন কথা নাই। আমার সামনে থেকে দূর

- স্যরি স্যরি স্যরি। এখন বল কোনদিক যাবি?
রবীন্দ্রসরোবর না চন্দ্রিমা উদ্যানের সেই লেকটার
পাশের সেই সিডিঁতে?
- তুই কি এই দুই জায়গা ছাড়া কিছুই চিনিস না? চল
সেই সিঁডিতে গিয়েই বসি
- হুম চল। দীঘির জলে তোকে চাঁদের ছায়া দেখাই।
(৩)
- কিরে তাকিয়ে তাকিয়ে কি দেখিস?
- তোকে দেখতেছি জান
- ও রিয়েলি! তা জান এভাবে দেখে লাভ?
- সবকিছু লাভ ক্ষতি দিয়ে হিসাব করতে নেই। চাঁদের
আলোয় তোকে খুব সুন্দর লাগছে
- হয়ছে চাপা দেওয়া বন্ধ
- আমার কথা কি তোর চাপা মনে হয়?
- হুম। ফাজিল, বদমাইশ, বান্দর একটা। আজ সারাদিন
কয়টা সিগারেট খাইছিস?
- জানি না
- জানি না মানে কি? সত্যি করে বল কয়টা সিগারেট
খাইছিস?
- বেশি না, সারাদিনে মাত্র দশ বারোটা হবে হয়তো
- গাধা তোর লজ্জা নাই। এতোবার করে বললাম
সপ্তাহে তিনটার বেশি খাবি না। মনে থাকে না আমার
কথা?
- স্যরি দোস্ত তোর সব কথাই মানতে পারব শুধু
এটা ছাড়া
- আমার চেয়ে তোর কাছে সিগারেটই যখন বড় তখন
আমাকে ছেডে সিগারেট নিয়েই থাক আর আমার
সাথে আর কথা বলবি না
- ঠিক আছে জান এখন থেকে তিনটা করেই খাব তাও
রাগ করিস না
- মনে যেন থাকে
- তথাস্তু দস্যুদেবি
(৪)
নীল পরীকে অসম্ভব রকমের ভালবাসলেও কোনদিন
তাকে সে তার ভালবাসার কথা প্রকাশ করতে পারেনি।
শুধু মাঝে মাঝে কবিতার ছন্দে সে তার
ভালবাসা প্রকাশ করত। পরীও নীলকে ভালবাসত।
কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার জন্য সেও তার
ভালবাসা প্রকাশ করেনি। কারন সে রক্ষণশীল হিন্দু
পরিবারের মেয়ে আর নীল মুসলমান। নীল একদিন
সাহস করে
- আমি যে তোকে খুব ভালবাসি এটা কি তুই জানিস?
- হুম জানি। কিন্তু আমাকে ভালবাসার দরকার নাই।
কেন এতো ভালবাসিস? কষ্ট পাবি তুই।
- ভালবাসার জন্য কোন কারন লাগে না তাই ভালবাসি
- এটা কোনদিনও সম্ভব না
- তো কি হয়ছে?
- অনেক কিছু। আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই না। তাই
বলছি আমায় ভুলে যা।
- ভুলে যাওয়ার জন্য তো ভালবাসিনি। আর
আমি তো তোকে বলছি না আমাকেও ভালবাসতে হবে।
আমি আমার মতো করে তোকে ভালবেসে যাব। কিন্তু
তোকে কোনদিন ভুলতে পারব না।
- আমিও যে তোকে ভালবাসি এটাও যেমন সত্য
তেমনি আমাদের ভালবাসা কেউ মনে নেবে না এটাও
তেমন ঠিক
- আমি মুসলমান আর তুই হিন্দু বলে?
- হুম। আর মাত্র কয়েক বছর পরই হয়তো আমার
বিয়ে হয়ে যাবে তখন তুই বেশি কষ্ট পাবি। তাই
বলছি এখনই আমায় ভুল যা।
- তোকে ভুলে থাকা যে সম্ভব না। আমি যে তোকে খুব
ভালবাসি।
পরী নীলকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। পরীর চোখের
জলে নীলের কাঁধ ভিজে যাচ্ছে। নীল আকাশের
দিকে তাকিয়ে মেঘের আনাগোনা দেখছে। আর
সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে তার
চিন্তাগুলা উড়িয়ে দিচ্ছে। প্রকৃতির
খেয়ালে তারা আজ যতোটা কাছে হয়তো একদিন
ততোটাই দূরে চলে যাবে নয়তো না.. নীলের
ভালবাসায় ভেসে যাচ্ছে পরী এক অনিশ্চিত
ভবিষ্যতের পানে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন