হ্যাঁ তাই তো, তুই আমার হৃদ্স্পন্দন। আমার
প্রতিটি নিঃশ্বাসের সঙ্গেই যেন
তোকে আমি অনুভব করছি। একটা মুহূর্ত
কি তোকে ছাড়া এখন আর ভাবা যায়? কত
আগ্রহ আর ভালোবাসার ফসল তুই!
তোকে নিয়ে হাজারো ভাবনা, কত
কী পরিকল্পনা—কী খেলে তুই সঠিক
পুষ্টি পাবি, কতক্ষণ ঘুমালে তোর শরীর সুস্থ
থাকবে, কোন বাহনে চড়লে তোর
ক্ষতি হবে না। জানিস,
দোতলা থেকে ওঠানামা করতে গিয়ে তোর
ক্ষতি হতে পারে ভেবে, তোর
বাবা আমাকে নানুর বাসায় নিয়ে এসেছে।
পত্রিকায় নবজাতক
শিশুকে নিয়ে কোনো লেখা থাকলেই
তা কেটে নিয়ে রেখে দিই চুপিচুপি,
কাজে লাগবে ভেবে। দোকানে ছোট শিশুর কিছু
দেখলেই কিনে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু সত্যিই কি পারব তেমন পরিবেশ
তৈরি করতে? তুই এমনই এক দেশে জন্মাবি,
যেখানে হাজারো সমস্যায় মানুষ প্রতিনিয়ত
ধুঁকছে। তোর ছোট্ট শরীরটার সঠিক বেড়ে ওঠার
জন্য ফল খেতে বলে সবাই, কিন্তু
তাতে বিষাক্ত দ্রব্য মেশানো। মাছ খাব,
তাতে ফরমালিন দেওয়া; মুরগি খাব, তাতেও
নাকি ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান
পাওয়া যাচ্ছে। শুনছি বাজারে ডিমেও
নাকি কী ভেজাল হচ্ছে। সবকিছু
বেছে খেয়ে নাহয় তোকে পৃথিবীতে নিয়েই
আসব, তারপর তোকেও একই রকম
করে বেছে বেছে খাইয়ে আদর-মমতায় বড়
করে তুলব। তুই টুকটুক করে বড় হয়ে ব্যাগ
কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাবি।
দেশে এখন কচি কচি মাথাগুলোকে শুরুতেই
নাকি মহাজ্ঞানী হয়ে উঠতে হবে। আর তাই
আনন্দের শৈশব বাদ দিয়ে তোকে সারা দিন এই
বই ওই বই নিয়ে বসে থাকতে হবে।
ছোট্ট প্রাণ আমার, তুই কি মায়ের এমন
চিঠিতে ভয় পাচ্ছিস? ভাবছিস, এত মন্দের
মাঝে কেন আমাকে নিয়ে আসছ? ভয় পাস
না জান আমার। মাঝে মাঝেই ভয় হচ্ছে, মন
খারাপ হচ্ছে। এতসব ভয়াবহ অবস্থার
মধ্যে তোকে কীভাবে টিকিয়ে রাখব? পরক্ষণেই
নতুন দিনের অপেক্ষায় থাকি। আমাদের
ভালোবাসা, যত্ন আর সঠিক পদক্ষেপের
মাধ্যমে নিশ্চয়
আমরা সুস্থভাবে তোকে বেড়ে উঠতে সাহায্য
করব। কারণ, তোরাই তো ভবিষ্যতের কান্ডারি,
এই দেশ যে তোদের হাত ধরেই ঘুরে দাঁড়াবে।
তোর অপেক্ষায় মা
শুক্রবার, ৮ আগস্ট, ২০১৪
আমার হৃদ্স্পন্দন
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন